আজ || বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪
শিরোনাম :
  তালায় খাদ্য নিরাপত্তায় ঝুঁকি ও ব্যবস্থাপনা বিষয়ক প্রশিক্ষণ       তালায় ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীদের মাঝে হাঁসের বাচ্চা বিতরণ       তালায় জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহ উপলক্ষ্যে প্রতিযোগিতা       তালায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নতুন ভবনের ভিত্তি প্রস্থর স্থাপনের উদ্বোধন       তালা উপজেলা চেয়ারম্যান ঘোষ সনৎ কুমারের সমর্থনে বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত       তালায় অসুস্থ বন্ধুর জন্য ৩০ হাজার টাকা দিলেন বন্ধুরা       তালায় তিন দিনব্যাপী কৃষি মেলার সমাপনী       সাতক্ষীরায় বৈদ্যুতিক খুটিতে ধাক্কায় মোটরসাইকেল চালক নিহত       তালায় সর্বজনীন পেনশন স্কিম বিষয়ক অবহিতকরণ সভা       তালায় আরএমটিপি প্রকল্পের বাজার সংযোগ সভা অনুষ্ঠিত    
 


সাংবাদিকতায় তোয়াব খান ছিলেন আদর্শ, প্রেরণার উৎস

নিজস্ব প্রতিনিধি ::
দৈনিক বাংলার প্রয়াত সম্পাদক একুশে পদকপ্রাপ্ত বর্ষীয়ান সাংবাদিক তোয়াব খান সব সরকারের আমলেই সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পদে ছিলেন। কারণ তিনি পেশার প্রতি নিষ্ঠাবান থেকে নিজের সেই গ্রহণযোগ্যতা তৈরি করেছিলেন। ৮৭ বছর বয়সে এসেও তিনি নতুন পত্রিকার হাল ধরে সাহসের পরিচয় দিয়েছিলেন। তিনি ছিলেন কনিষ্ঠ সহকর্মীদের আদর্শ। তিনি সব সময় তরুণ সহকর্মীদের উৎসাহ, অনুপ্রেরণা দিতেন। তিনি ছিলেন সম্পাদকদের সম্পাদক।

রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে শনিবার বেলা ১২টার দিকে এক স্মরণসভায় এসব কথা বলেন জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকেরা। জাতীয় প্রেসক্লাবের ৬৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে প্রেসক্লাবের আজীবন সদস্য ও দৈনিক বাংলার প্রয়াত সম্পাদক তোয়াব খান, সাবেক সভাপতি রিয়াজউদ্দিন আহমেদসহ ১৬ সদস্য স্মরণে এ সভার আয়োজন করা হয়।

জাতীয় প্রেসক্লাবের এই আয়াজনে তোয়াব খানকে নিয়ে স্মরণসভায় জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকেরা বলেন, পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে চাকরিচ্যুত ও কারাভোগও করেছেন তোয়াব খান। পেশাজীবনের শুরু থেকে এ দেশের সাংবাদিকতায় নতুনত্ব, আধুনিকতা ও সৃষ্টিশীলতার অনন্য দৃষ্টান্ত রেখেছেন তিনি। সাংবাদিকতার মাধ্যমে অন্যায়, অবিচার, দুর্নীতির বিরুদ্ধে আপসহীন ও অবিচল সংগ্রামী ছিলেন তোয়াব খান।

জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন বলেন, আপাদমস্তক সাংবাদিক তোয়াব খান ৮৭ বছর বয়সে নতুন পত্রিকার হাল ধরেছিলেন। তার যে সাহস, তা প্রমাণ করে তিনি সাংবাদিকতাকে কতটা ভালোবাসতেন। এদিকে রিয়াজউদ্দিন আহমেদ সংবাদপত্রের স্বাধীনতা, সাংবাদিকদের অধিকার নিয়ে সোচ্চার ছিলেন। এ সভায় যাদের স্মরণ করা হচ্ছে, তারা প্রত্যেকেই তাদের কাজ, চিন্তা দিয়ে দেশের সাংবাদিকতাকে সমৃদ্ধ করেছেন।

তোয়াব খান দেশের সাংবাদিকতা এবং প্রজাতন্ত্রের সেবক হিসেবে অনন্য মডেল মন্তব্য করে জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি শওকত মাহমুদ বলেন, ‘তোয়াব খান সব সরকারের আমলেই গুরুত্বপূর্ণ পদে ছিলেন। তাকে সবাই শ্রদ্ধা করত। তিনি সফলভাবে কাজ করেছেন। যারা সাংবাদিকতা করতে চায়, করেন, তোয়াব খান তাদের উৎসাহ দিতেন। একইসঙ্গে প্রেসক্লাবের যেসব সদস্যদের আমরা হারিয়েছে, তাদের প্রত্যেকেই আপন পর্বে সফল ছিলেন।’

জাতীয় প্রেসক্লাবের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি কবি হাসান হাফিজুর রহমান বলেন, পাঠকের আগ্রহের বিষয়গুলো তোয়াব খান বুঝতেন। তিনি সংবাদের গুরুত্ব বুঝতেন। কনিষ্ঠদের সেভাবেই সংবাদ লেখার পরামর্শ দিতেন তিনি।

বিএফইউজের সাবেক মহাসচিব আবদুল জলিল ভুঁইয়া বলেন, যারা প্রয়াত হয়েছেন, তারা সাংবাদিক ছিলেন এবং পেশায় নানাভাবে ভূমিকা রেখে গেছেন। তোয়াব খান ও রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ সাংবাদিকতায় যে অবদান রেখে গেছেন, তা সকলের জন্য অনুসরণীয়।

ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি কুদ্দুস আফ্রাদ বলেন, ‘তোয়াব খান, রিয়াজউদ্দিন আহমেদ-তারা আমাদের আস্থার জায়গায় ছিলেন। তারা আমাদের পথ দেখাতেন।’

জনকণ্ঠের নির্বাহী সম্পাদক ওবায়দুল কবির বলেন, তার (তোয়াব খান) সঙ্গে দীর্ঘদিন কাজ করেছি। তিনি ছিলেন আপাদমস্তক পেশাদার সাংবাদিক। তিনি কাজের সমালোচনা করতেন, শুনতেনও। আদর্শবান এই মানুষটির মনে থাকত কেবল সংবাদ আর সংবাদ।

দৈনিক বাংলার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক শরিফুজ্জামান পিন্টু বলেন, তোয়াব খান ছিলেন সম্পাদকদের সম্পাদক। তার বর্ণাঢ্য জীবন ঈর্ষণীয়। ৮৭ বছর বয়সেও তার মস্তিস্ক সক্রিয় ছিল। এ বয়সে এসে তিনি আবার দৈনিক বাংলা শুরু করেছিলেন। এটাই তাঁর জীবনের সৌন্দর্য। যে আদর্শ তিনি স্থাপন করে গেছেন, তা সচরাচর দেখা যায় না। তিনি বলেন, পেশার জায়গায় তোয়াব খান খুব পরিষ্কার ছিলেন। তিনি বঙ্গবন্ধুর প্রেস সেক্রেটারি ছিলেন। জিয়াউর রহমান, এরশাদের আমলেও তিনি সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পদে ছিলেন। এদিকে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, অধিকার-এসব বিষয়ে বোঝার জন্য আস্থার জায়গায় ছিলেন রিয়াজউদ্দিন আহমেদ। তিনি এসব বিষয়ে জ্ঞানের ভান্ডার ছিলেন।

সভার শুরুতে প্রেসক্লাবের প্রয়াত সদস্যদের স্মরণে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়। প্রয়াত দুই বরেণ্য সাংবাদিক ছাড়াও গত এক বছরে প্রয়াত সাংবাদিক গীতিকার কে জি মোস্তফা, এস এম শওকত হোসেন, রাজা সিরাজ, মো. শামীম মাশরেকী, সৈয়দ আকরাম, খন্দকার আনিছুর রহমান, পীর হাবিবুর রহমান, শামসুল আলম বেলাল, সাগর বিশ্বাস, এ এম মুফাজ্জাল, এ এইচ এম জালাল আহমেদ, আবুল বাশার নূরু, শফিকুল ইসলাম ইউনুস ও গিয়াস উদ্দিন আহমেদকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করেন জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকরা।

সভায় প্রয়াতদের পরিবারের সদস্যদের মধ্যে সাগর বিশ্বাসের সহধর্মিণী প্রতীভা বিশ্বাস, পীর হাবিবুর রহমানের ছেলে ফাহিম অন্তর, রাজা সিরাজের ছেলে প্রীতম, শামীম মাশরেকীর ভাই নাঈম মাশরেকী, জালাল আহমেদের ছেলে রাহাত ইসলাম স্মৃতিচারণ করেন। সভা সঞ্চালনা করেন প্রেসক্লাবের সদস্য আইয়ুব ভূইয়া।

স্মরণ সভায় আরও বক্তব্য দেন জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক কামরুল ইসলাম চৌধুরী, বাংলাদেশ সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সুভাস চন্দ্র, বাংলাদেশ প্রতিদিনের নির্বাহী সম্পাদক আবু তাহের, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের মহাসচিব দীপ আজাদ প্রমুখ।


Top