আজ || শুক্রবার, ১০ মে ২০২৪
শিরোনাম :
  তালার মাগুরা কাপপিরিচ প্রতীকের নির্বাচনী অফিস উদ্বোধন       ধানদিয়ায় কাপ পিরিচ প্রতীকের পক্ষে প্রভাষক প্রণব ঘোষ বাবলুর গণসংযোগ       খেশরায় কাপ পিরিচে ভোট চেয়ে ঘোষ সনৎ কুমারের গণসংযোগ       খলিলনগরে কাপ পিরিচ প্রতীকের পক্ষে প্রভাষক প্রণব ঘোষ বাবলুর গণসংযোগ       তালার খলিষখালীতে কাপপিরিচ প্রতীকের নির্বাচনী অফিস উদ্বোধন       জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সাথে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে ঘূর্ণিঝড়ের পূর্বাভাস ভিত্তিক অবহিতকরণ সভা       তালায় কাপ পিরিচ প্রতীকের শোডাউন       অভিন্ন চাকুরীবিধি বাস্তবায়নের জন্য সাতক্ষীরা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিতে কর্মবিরতি পালন       তালায় বন্ধ রয়েছে পল্লী বিদ্যুতের কার্যক্রম ॥  সেবা থেকে বঞ্চিত গ্রাহকরা         তালায় ১১৫ জন শিক্ষার্থীর মাঝে অর্থ বিতরণ    
 


বাংলা বর্ষবরণ ও প্রাসঙ্গিক ভাবনা //গাজী মোমিন উদ্দীন//

বাঙালির প্রাণের উৎসব পয়লা বৈশাখ বাংলা বর্ষবরণ। সকল ধর্মের মানুষের সম্মিলিত উচ্ছ্বাসের দিন এই বাংলা নববর্ষ। তাই সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় সম্পর্কের উর্ধ্বে উঠে মানুষে মানুষে একাকার হওয়ার জন্য বিশেষ দিন হচ্ছে পয়লা বৈশাখ। সকল মত, ভেদাভেদ ও চেতনার সংকীর্ণতাকে মুছে ফেলে জাগতিক নিচুতাকে পায়ে দলে নতুন দিনের আহবানে সাড়া দিয়ে সারা বছরের একটি দিনে সবাই অভিন্ন আনন্দোৎসবে মেতে ওঠার দিন পয়লা বৈশাখ অর্থাৎ বাংলা বর্ষবরণ। আমাদের সমাজে বাংলা বর্ষবরণ নিয়ে কারো কারো নেতিবাচক মনোভাব পোষণ করতে দেখা যায়। কেউ কেউ এটাকে ধর্মবিরোধী আখ্যা দিয়ে নিজেদের মতের বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়ে বাংলা বর্ষবরণকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে চায়।

কেউ কেউ বাংলা বর্ষবরণকে সাংস্কৃতিক অপচর্চা বলে এর গুরুত্ব ও তাৎপর্যকে অস্বীকার করে নিজদের বাংলা বর্ষবরণ থেকে গুটিয়ে রেখে প্রকারান্তরে অসামাজিকতার পরিচয় দিয়ে থাকেন। কেউ কেউ বাংলা বর্ষবরণকে হিন্দুদের উৎসব আখ্যা দিয়ে ঘোরতর সাম্প্রদায়িক মানুষের পরিচয়ে নিজেকে তুলে ধরতে চায়। আসলে আমাদের চেতনার বাতিঘর মহান মুক্তিযুদ্ধ। তার ভিত্তি ছিল অসাম্প্রদায়িক চেতনা। সকল ধর্মের মানুষের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আমাদের মহান স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছিল। যার নেতা ছিলেন বাঙালির বহুল আকাঙ্ক্ষিত হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।। তিনি আমাদের সব মানুষকে এক হয়ে দেশ স্বাধীনের জন্য অনুপ্রাণিত করতে পেরেছিলেন। তার অবিসংবাদিত ভুমিকায় আমরা একটা স্বাধীন দেশ পেয়েছি। ফলে মুক্ত বাতাসে শ্বাস নিতে পারছি। এই চেতনার ধারাবাহিকতায় আমরা বাংলা বর্ষবরণ করতে পারি সকলে, সবাই যার যার অবস্থান থেকে আনন্দ ও উচ্ছ্বাসের বাঁশি বাজিয়ে। একমাত্র ধর্মনিরপেক্ষ অনুষ্ঠান হল পয়লা বৈশাখ। এই দিনে আমরা ফিরে যেতে চাই আমাদের ইতিহাসের কাছে, আমাদের ঐঐতিহ্যের কাছে। আমাদের ফেলে আসা দিনগুলোতে। আমাদের নন্দিত শৈশবের কাছে। আমরা ফিরতে পারি আমাদের হাসিখুশির ছেলেবেলায়। যখন পয়লা বৈশাখ এলে বাড়ি বাড়ি পান্তাভাত খাওয়ার ধুম পড়ে যেতাও। এমনিতে গ্রামে ছোটবেলার দরিদ্র হোক আর স্বচ্ছল হোক সবার মধ্যে পান্তাভাত খাওয়ার একটা ইচ্ছে কাজ করতো। পান্তাভাতের সাথে ইলিশ খাওয়ার প্রবণতা ভীষণভাবে লক্ষ্যণীয় ছিল।

দিন বদলাতে শুরু হয়। মানুষের জীবনাচারে পরিবর্তন আসতে শুরু করে। এক শ্রেণির মানুষের প্রবল বিরোধের মুখে হারিয়ে যেতে শুরু করে বৈশাখী মেলা।

আমরা হারিয়ে ফেলেছি গ্রামীণ সেই ঢালিখেলা। যাকে অঞ্চলভেদে লাঠিখেলাও বলা হয়। পয়লা বৈশাখ কেন্দ্রিক বিভিন্ন আয়োজনে ভাটা পড়ে। এত সবকিছুর ভিড়েও আজ চালু আছে এসব অনুষ্ঠান। বর্ষার শুরুতে নতুন পানি পেলে যেমন মাছেদের মধ্যে নতুন জাগরণ ঘটে, বসন্তকালে যেমন গাছে গাছে নতুন পাতা গজিয়ে ওঠে, নতুন ধানে যেমন নবান্ন আনন্দ দেয়, ঠিক তেমনি পয়লা বৈশাখ বাঙালির মনে নতুন উদ্দীপনা সৃষ্টি করে। আনন্দ বন্যায় ভাসিয়ে আনে অসাম্প্রদায়িকতার কাছে।

সবাই মিলেমিশে একাকার হয়ে বরণ করে নতুন বছর। আমরা হারিয়ে যায় বাংলা বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে। পয়লা বৈশাখের ইতিহাস নিয়ে অনেক বলা হয়। আমি সেদিকে না গিয়ে শুধু বলতে চাই, আসুন পয়লা বৈশাখকে আমাদের অসাম্প্রদায়িক চেতনায় সবার অনুষ্ঠানে পরিণত করে প্রকৃত বাঙালি হয়ে উঠি। মাছে ভাতে বাঙালি, শাড়িতে বাঙালি, পাঞ্জাবিতে বাঙালি, লুঙ্গিতে বাঙালি শুধু না হয়ে ব্যবহারে, কথায়, বিশ্বাসে ও অস্তিত্বের সমস্ত জায়গায় বাঙালি হয়ে উঠি। তাহলে আজ সফল হবে আমাদের বাংলা বর্ষবরণ।

কে হিন্দু, কে মুসলিম, কে কোন ধর্মের এটা হিসাব না করে আমরা সবাই মানুষ এই চেতনায় এগিয়ে এসে বাংলা বর্ষবরণ করি। আবার ফিরে যেতে চাই গ্রামীণ সেই ইতিহাস-ঐতিহ্য ও কৃষ্টিকালচারের দিকে। আমরা পরিপুষ্ট বাঙালি হয়ে উঠি।

বাংলা নববর্ষের শুভেচ্ছা ও ভালবাসায় সবাইকে নতুন মেলবন্ধনের সুতোয় বেঁধে নতুনভাবে নতুন সম্পর্কে জড়াতে চাই। যেখানে সকলের অভিন্ন উদ্দেশ্য হবে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা বিনির্মাণ। উন্নয়নের অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রায় ধাবমান বাংলাদেশকে এগিয়ে নেওয়ার প্রচেষ্টায়। দেশের সকল সুসময় ও দুঃসময়ে একাকার হয়ে প্রিয় জন্মভূমি বাংলাদেশকে এগিয়ে নেওয়ায়। মানুষ মানুষের জন্য, এই শ্লোগান ধারণ করে এগিয়ে যেতে। পরিশেষে উচ্চারণ করতে চাই সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হকের সেই বাণী-

তবে তুমি বুঝি বাঙালি জাতির বীজমন্ত্র শোন নাই
সবার উপরে মানুষ সত্য, তাহার উপর নাই
এক সাথে আছি, এক সাথে বাঁচি, আজও এক সাথে থাকবোই, সব বিভেদের রেখা মুছে দিয়ে সাম্যের ছবি আকঁবোই।
পরিচয়ে আমি বাঙালি আমার আছে ইতিহাস গর্বের,
কখনো ভয় করিনাকো আমি ঔদ্ধ্যত কোন খড়গের।
শত্রুর সাথে লড়াই করেছি স্বপ্নের সাথে বাস,অশ্রেও শান দিয়েছি যেমন শস্য করেছি চাষ।
হাসিমুখে বাজায়েছি বাঁশি গলায় পরেছি ফাঁস
আপোষ করিনি কখনও আমি এই হল ইতিহাস।
এই ইতিহাস ভুলে যাব আজ আমি কি তেমন সন্তান,
যখন আমার জনকের নাম শেখ মুজিবুর রহমান।


Top