আজ || শুক্রবার, ১০ মে ২০২৪
শিরোনাম :
  তালার মাগুরা কাপপিরিচ প্রতীকের নির্বাচনী অফিস উদ্বোধন       ধানদিয়ায় কাপ পিরিচ প্রতীকের পক্ষে প্রভাষক প্রণব ঘোষ বাবলুর গণসংযোগ       খেশরায় কাপ পিরিচে ভোট চেয়ে ঘোষ সনৎ কুমারের গণসংযোগ       খলিলনগরে কাপ পিরিচ প্রতীকের পক্ষে প্রভাষক প্রণব ঘোষ বাবলুর গণসংযোগ       তালার খলিষখালীতে কাপপিরিচ প্রতীকের নির্বাচনী অফিস উদ্বোধন       জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সাথে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে ঘূর্ণিঝড়ের পূর্বাভাস ভিত্তিক অবহিতকরণ সভা       তালায় কাপ পিরিচ প্রতীকের শোডাউন       অভিন্ন চাকুরীবিধি বাস্তবায়নের জন্য সাতক্ষীরা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিতে কর্মবিরতি পালন       তালায় বন্ধ রয়েছে পল্লী বিদ্যুতের কার্যক্রম ॥  সেবা থেকে বঞ্চিত গ্রাহকরা         তালায় ১১৫ জন শিক্ষার্থীর মাঝে অর্থ বিতরণ    
 


তালায় কপোতাক্ষ অববাহিকায় টিআরএম চালু রাখার দাবিতে মানববন্ধন

জলবদ্ধতা ও পরিবেশ সমস্যা মোকাবেলায় তালা উপজেলার কপোতাক্ষ অববাহিকায় টিআরএম চালু রাখার দাবিতে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। বুধবার (২০ জুলাই) সকালে তালা উপজেলা পানি কমিটির আয়োজনে উপজেলা পরিষদের সামনে বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষের অংশগ্রহণে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।

তালা উপজেলা পানি কমিটির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. ময়নুল ইসলামের সভাপতিত্বে ও পানি কমিটির সাধারণ সম্পাদক মীর জিল্লুর রহমানের সঞ্চালনায় মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন তালা সদর ইউনেয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা যুবলীগের সভাপতি সরদার জাকির হোসেন, উপজেলা নাগরিক কমিটির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধার আলাউদ্দিন জোয়ার্দার, তালা সদর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি শাহাবুদ্দীন বিশ^াস, প্রভাষক মোঃ রেজাউল করিম, পানি কমিটির নেতা সরদার ইমান আলী, উপজেলা শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক শফিউর রহমান ডানলাপ, আমরা বন্ধু যুব সংগঠনের সভাপতি এস এম নাহিদ হাসান প্রমুখ।
মানবন্ধনে তালা উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, আমরাবন্ধু যুব ফাউন্ডেশন, পাঠক ফোরামসহ বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের সদস্যবৃন্দ অংশ নেয়। মানববন্ধন শেষে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মাধ্যমে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক বরাবরা স্মারকলিপি প্রদান করা হয়।

স্মারকলিপি

বরারব,
মাননীয় জেলা প্রশাসক মহোদয়
সাতক্ষীরা

মাধ্যমঃ উপজেলা নির্বাহী অফিসার,
তালা উপজেলা
সাতক্ষীরা

বিষয়ঃ কপোতাক্ষ অববাহিকার জলাবদ্ধতা ও পরিবেশ সমস্যা মোকাবেলায় অবিলম্বে টিআরএম চালু করার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ।

কপোতাক্ষ ঐতিহ্যবাহী একটি দীর্ঘ নদী। যশোর জেলার চৌগাছা উপজেলার তাহিরপুর থেকে খুলনা জেলার পাইকগাছা সদরের শিববাটী পর্যন্ত অববাহিকায় বসবাস করে প্রায় ২০ লক্ষাধিক মানুষ। আপনি বিশেষভাবে অবগত আছেন যে, কপোতাক্ষ নদ খননের পাশাপাশি সাতক্ষীরা জেলার তালা উপজেলার পাখিমারা বিলে টিআরএম কার্যক্রম বাস্তবায়ন হওয়ার ফলে বিশাল কপোতাক্ষ অববাহিকার জনজীবনে স্বস্তি দেখা দিয়েছে, দীর্ঘদিনের জলাবদ্ধতার কবল থেকে এই এলাকা মুক্ত হয়েছে। কিন্তু বর্তমানে বিভিন্ন জটিলতার কারণে পাখিমারা বিলে টিআরএম কার্যক্রম অব্যাহত রাখা যাবে কিনা তা নিয়ে বিভিন্ন ধরণের সন্দেহ দেখা দিয়েছে।

বিগত শতকের ৯০ দশকের শুরুতেই এ এলাকায় জলাবদ্ধতার সূত্রপাত ঘটে। তারপর দুই দশক যাবৎ জলাবদ্ধতার তীব্রতা প্রকট আকার ধারণ করে। অতিমাত্রায় পলি জমে এলাকার বহু নদ-নদীর মৃত্যু এবং চরম নাব্যতা সংকটের কারণে নিম্ন অববাহিকার বৃহৎ শিবসা নদীও নাব্যতা বা অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে। এ সমস্যা সমাধানে সরকার কার্যকরী পদক্ষেপ হিসেবে কপোতাক্ষ অববাহিকায় প্রকল্প গ্রহণ করে।

কপোতাক্ষ অববাহিকার প্রকল্পটি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জাতির জনক বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার প্রতিশ্রুত ‘কপোতাক্ষ নদের জলাবদ্ধতা দূরীকরণ প্রকল্পটির প্রথম পর্যায়ের’ কার্যক্রম ২০১৭ সালের জুন মাসে সমাপ্ত হয়েছে। এ প্রকল্প বাস্তবায়ন দ্বারা বিশেষ করে তালা উপজেলার পাখিমারা বিলে টিআরএম বাস্তবায়িত হওয়ার কারণে বিশাল কপোতাক্ষ অববাহিকার প্রায় ২০ লক্ষ অধিবাসী সরাসরি উপকৃত হয়েছে। বলা বাহুল্য দীর্ঘদিনের জলাবদ্ধতা দূরীভূত হওয়ায় মানুষের জীবন-জীবিকা এখন নিরাপদে আছে। এজন্য এলাকাবাসী মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে চির কৃতজ্ঞ।

উল্লেখ্য যে, জনগণের কাছে পূর্বের দেয়া প্রতিশ্রুতি ও সফলতা রক্ষায় বা টেকসই করার লক্ষ্যে সরকার আবারও প্রকল্পটির ২য় পর্যায় অনুমোদন দেয়। গত ১৮ আগষ্ট’২০২০ তারিখ রাজধানীর শেরেবাংলা নগর এনইসি সভাকক্ষে একনেক চেয়ারপার্সন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত একনেক সভায় এ প্রকল্পের অনুমোদন দেয়া হয়। প্রকল্পটির নাম ‘কপোতাক্ষ নদের জলাবদ্ধতা দূরীকরণ প্রকল্প (২য় পর্যায়)’। প্রকল্পটিতে খরচ হবে ৫৩১ কোটি ৭ লাখ টাকা। সরকারি অর্থায়নে ৪ বছর মেয়াদী প্রকল্পটি ২০২০ সালের জুলাই থেকে ২০২৪ সালের জুনের মধ্যে বাস্তবায়ন করা হবে।

অনুমোদিত প্রকল্পটিতে কপোতাক্ষ অববাহিকার জলাবদ্ধতা নিরসন কল্পে টিআরএমকে যুক্ত করে কপোতাক্ষ নদের উজান অংশে যশোর জেলার চৌগাছা উপজেলার তাহেরপুর হতে মনিরামপুর উপজেলার চাকলা ব্রীজ পর্যন্ত ৭৫ কিমি. এবং নি¤œাংশে খুলনা জেলার পাইকগাছা উপজেলার বোয়ালিয়া হতে কয়রা উপজেলার আমাদী পর্যন্ত ৩০ কিমি. নদী খনন, তীর প্রতিরক্ষা কাজ বাস্তবায়ন, নিষ্কাশন অবকাঠামো নির্মাণ ও মেরামত করা, কপোতাক্ষ নদের দুই তীরে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ মেরামত করা সহ নদের সাথে সংযুক্ত খাল খনন করা কার্যক্রম অন্তর্ভূক্ত রয়েছে। উল্লেখ্য, ইতোমধ্যে সরকার কর্তৃক পলি ব্যবস্থাপনা, টাইডাল প্রিজম বৃদ্ধি ও নিষ্কাশন ক্ষমতা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে ৩৫ বছর মেয়াদী জোয়ার-ভাটা নদী ব্যবস্থাপনা (টিআরএম) কার্যক্রম চালানোর এই উদ্যোগও গ্রহণ করেছে।
এ অঞ্চলের নাগরিক কমিটি পানি কমিটি কর্তৃক সরেজমিনে পরিদর্শনে দেখা গেছে যে, প্রথম পর্যায় প্রকল্পের উপকার অব্যাহত রাখার স্বার্থে প্রকল্পটির দ্বিতীয় পর্যায়ের কার্যক্রম স্বচ্ছতার সাথে সঠিকভাবে বাস্তবায়িত হওয়া অতীব প্রয়োজন। কিন্তু দুঃখজনক বিষয় হলো, ইতোমধ্যে দ্বিতীয় পর্যায়ের প্রকল্পটি ২ বছর পার হলেও টিআরএম চালু হয়নি। এমনকি গত ১৮.১২.২০২১ তারিখে মাঠ পর্যায়ে প্রকল্পের খনন কার্যক্রম দৃশ্যমান হয়েছে যা ধীর গতিতে চলমান রয়েছে। আমরা লক্ষ্য করেছি যে, এ অঞ্চলের ভঙ্গুর প্রাকৃতিক বৈশিষ্ঠের কারণে প্রকল্পটির বিভিন্ন ধাপ পর্যায়ক্রমে যথাসময়ে সম্পন্ন করা না হলে প্রকল্পটির কার্যকারিতা হ্রাস পাবে। তাছাড়া বাস্তবায়ন কর্তৃপক্ষের দীর্ঘ এ সময় ক্ষেপনের ফলে ক্ষণভঙ্গুর এলাকার প্রকল্প হিসেবে ২০২০-২১ অর্থবছরের বছর ভিত্তিক আর্থিক ও বাস্তব পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হয়নি। যার ফলে একদিকে যেমন টিআরএম চালু করা সম্ভব হয়নি অন্যদিকে পলি জমে আবারও নদী ভরাট হতে শুরু করেছে এবং বিলের পেরিফেরিয়াল বাঁধও ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। ক্ষতিপূরণ প্রাপ্তিসহ বিল ব্যবস্থাপনায় দেখা দিয়েছে বিভিন্ন ধরণের বিশৃঙ্খলা। একদিকে টিআরএম বন্ধ থাকা অন্যদিকে পলি পড়ে দ্রুত নদী ভরাট হওয়ায় অববাহিকার মানুষ পুনরায় জলাবদ্ধতার আশংকায় শংকিত রয়েছে।

সমস্যা মোকাবেলায় পানি কমিটির দাবী সমূহ ঃ-

বলার অপেক্ষা রাখেনা যে নদী না বাঁচলে এলাকাকে বাঁচানো সম্ভব হবে না। এক্ষেত্রে নদী খনন এবং নদীকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য কপোতাক্ষ অববাহিকায় টিআরএম বা জোয়ারাধার প্রযুক্তি অব্যাহত রাখা সর্বোচ্চ দাবী রাখে।

১. অবিলম্বে পেরিফেরিয়াল বাঁধ সংস্কার পূর্বক পাখিমারা বিলের টিআরএম চালু করা হোক।
২. গুরুত্ব দিয়ে সরকারের “অশগ্রহণমূলক পানি ব্যবস্থাপনা নীতিমালা”-র আলোকে এ প্রকল্পের আওতায় দাবীদার ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ প্রদান করা হোক।
৩. কপোতাক্ষ নদের জলাবদ্ধতা দূরীকরণ প্রকল্প ২য় পর্যায়ের বাস্তবায়ন ডিজাইন অনুযায়ী করা হোক।

এমতাবস্থায় আপনার নিকট জনগণের আকুল আবেদন কপোতাক্ষ অববাহিকার অধিবাসীদের জীবন-জীবিকা যাতে অব্যাহত থাকে এবং অববাহিকা যাতে আবারও জলাবদ্ধ কবলিত না হয় তার জন্য কপোতাক্ষ অববাহিকার জলাবদ্ধতা ও পরিবেশ সমস্যা মোকাবেলায় চলমান প্রকল্পের আওতায় যথাযথভাবে পাখিমারা বিলে টিআরএম বাস্তবায়নে জরুরীভাবে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক।


Top