আজ || রবিবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪
শিরোনাম :
 


কপিলমুনিতে বিনোদ জয়ন্তী-২০২২ উদযাপন

মাননীয় সংসদ সদস্য, পাইকগাছা-কয়রা (খুলনা-০৬) আক্তারুজ্জামান বাবু’কে সংবর্ধনা স্মারক প্রদান করছেন বিনোদ পৌত্র ও বিনোদ স্মৃতি সংসদের প্রধান উপদেষ্টা গৌতম সাধু।

নিজস্ব প্রতিবেদক : :

রায় সাহেব বিনোদ সাধু মহোদয়ের ১৩৩ তম শুভ জন্মতিথীতে বিনোদ পৌত্র গৌতম সাধুকে জমকালো সংবর্ধনা প্রদান ও ১৩৩ পাউন্ড ওজনের কেক কাটার মধ্য দিয়ে বিনোদ জয়ন্তী-২০২২ পালন করা হয়েছে। এদিন প্রায় ২৫ হাজার মানুষের মধ্যাহ্নভোজের আয়োজন করা হয় কপিলমুনি সহচরী বিদ্যামন্দির, মেহেরুন্নেচ্ছা উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় ও কপিলমুনি ধান্য চত্ত্বরে মোট ৩টি প্যান্ডেলে।

বিনোদ জয়ন্তী-২০২২ উপলক্ষ্যে আয়োজিত বর্নাঢ্য শোভাযাত্রার একাংশ

মঙ্গলবার (১০ মে) সকাল ৯:৩০ মিনিটে ভরত চন্দ্র হাসপাতাল প্রাঙ্গন থেকে বিনোদ স্মৃতি সংসদের উদ্যোগে একটি শোভাযাত্রার মাধ্যমে বিনোদ জয়ন্তী-২০২২ এর শুভানুষ্ঠান শুরু হয় এবং সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে বিনোদ জয়ন্তী-২০২২ এর সমাপনী ঘোষনা করা হয়। কপিলমুনি সহচরী বিদ্যামন্দির প্রাঙ্গনে আয়োজিত স্মরন সভা ও সংবর্ধনা অনুষ্ঠান- ২০২২ এর মাধ্যমে অনুষ্ঠানের মূল পর্বের শুরু হয়। উক্ত স্মরণ সভা ও সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিনোদ স্মৃতি সংসদের প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি এ্যাড. দিপঙ্কর কুমার সাহা।

অনুষ্ঠানে সংবর্ধিত অতিথি হিসেবে স্ব-পরিবারে উপস্থিত ছিলেন বিনোদ বিহারী মহোদয়ের পৌত্র গৌতম সাধু। প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন পাইকগাছা-কয়রা (খুলনা-০৬) এর মাননীয় সংসদ সদস্য আলহাজ্ব মোঃ আক্তারুজ্জামান বাবু। এসময় বিনোদ স্মৃতি সংসদের পক্ষ হতে সংবর্ধিত অতিথি বিনোদ বিহারী সাধু মহোদয়ের পৌত্র ও বিনোদ স্মৃতি সংসদের প্রধান উপদেষ্টা গৌতম সাধু ও প্রধান অতিতিকে সংবর্ধনা স্মারক প্রদান করা হয়।

বিনোদ পৌত্র গৌতম সাধুকে সংবর্ধনা স্মারক প্রদান করছেন বিনোদ স্মৃতি সংসদের প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি এ্যাড. দিপঙ্কর কুমার সাহা।

স্মরণ সভায় সংবর্ধিত অতিথি গৌতম সাধু তার দাদু দানবীর রায় সাহেব বিনোদ বিহারী সাধু’র স্মৃতি বিজড়িত কপিলমুনি ও কপিলমুনির মানুষের উদ্দেশ্যে সংক্ষিপ্ত এক আবেগঘন বক্তব্য রাখেন। তিনি বলেন, “প্রায় ৫০ বছর পর আমি কপিলমুনিতে এসেছি দাদুর রেখে যাওয়া অমর কীর্তি কপিলমুনি তথা বিনোদ গঞ্জকে দেখতে, আপনাদের দেখতে ও জানতে। আপনাদের আন্তরিকতায় ও দাদুর প্রতি আপনাদের নির্মোহ ভালোবাসা দেখে আমি অভিভূত, আবেগাপ্লুত।”

তিনি আরও বলেন, “বিনোদ স্মৃতি সংসদ সর্বদাই রায় সাহেবের স্মৃতিকে সমুন্নত রাখতে নিরলস কাজ করে যাচ্ছে। মূলত বিনোদ স্মৃতি সংসদের একান্ত প্রচষ্টো ও আমন্ত্রনেই আমি স্ব-পরিবারে ভারত থেকে কপিলমুনিতে আসতে পেরেছি। তাই বিনোদ স্মৃতি সংসদের সভাপতি এ্যাড. দিপঙ্কর কুমার সাহা সহ বিনোদ স্মৃতি সংসদের সকল কর্মী ও কপিলমুনিবাসীর কাছে আমি কৃতজ্ঞ। আমি সত্যিই নিজেকে সংযত রাখতে পারছি না। আমি আমার পরিবারকে বলেছি, কপিলমুনির মানুষের কল্যাণে আমার দাদু যে অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন, যে অকৃপণ হাতে দান করে গিয়েছেন, সেই কপিলমুনির মানুষগুলো আমার দাদুর হৃদয়ের খুব কাছের, আমরা তাদের সাথে পরিচিত হতে তাদের সাথে নিজেদের স্মৃতি, সুখ, দুঃখ ভাগাভাগি করে নিতে কপিলমুনিতে যাচ্ছি।”

এসময় তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন- “তবে বিগত দিনে এই কপিলমুনিতেই কতিপয় দুর্বৃত্ত ও স্বার্থান্বেষী ব্যক্তি ও রায় সাহেবের কথিত বংশধররা রায় সাহেবের অনুষ্ঠানের ব্যানার নামিয়ে তার স্মৃতিতে আয়োজিত অনুষ্ঠান বন্ধ করে দিয়ে যে অন্যায় করেছিলেন, সামাজিক কিংবা রাজনৈতিক দৃষ্টিকোন বলুন কোনভাবেই তা গ্রহণযোগ্য নয়, এ যে বড় অপমানের বড়ই পরিতাপের। এমনকি সুদীর্ঘ ৫০ বছর পর আমি কপিলমুনিতে পদার্পন করার পরেও আজকের অনুষ্ঠানটি ভন্ডুল করার জন্য চোরা ¯্রােতের ন্যায় একটা কুচক্রী মহল কাজ করে যাচ্ছে। এছাড়া রায় সাহেব বিনোদ বিহারী সাধু মহোদয় তার জীবদ্দশায় নিজের সকল সম্পত্তি কপিলমুনিবাসীর কল্যানে নিঃস্বার্থে দান করে গিয়েছিলেন তা কিভাবে কথিত বংশধররা অন্যায়ভাবে ভোগদখল করছেন, সে বিষয়েও আমি উপস্থিত সকলের কাছে প্রশ্ন রাখছি।”

প্রধান অতিথির বক্তব্যে মাননীয় সাংসদ মোঃ আক্তারুজ্জামান বাবু বলেন, “মাত্র ৪৬ বছর বয়সে রায় সাহেব বিনোদ বিহারী সাধু পরলোকগত হন। অথচ তার যে বিশাল কর্মযজ্ঞ ও কল্যানকর সকল মহৎ কাজ তা হয়তো কয়েক শতাব্দীতেও অন্য কারো পক্ষে করা সম্ভব নয়। এ অঞ্চলের মানুষের কল্যাণে তিনি আজীবন অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন, দান করেছেন অকৃপণভাবে। আজ কপিলমুনিকে একটি আদর্শ নগরী রূপে প্রতিষ্ঠিত করতে তার অবদান আর পরিশ্রম আমাদের হতবাক করে দেয়। তিনি ছিলেন একজন সত্যিকার ভবিষ্যত দ্রষ্টা। আমরা তাকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করি ও অন্তরের অন্তস্থল হতে তার জন্য ভালোবাসা জানাই। রায় সাহেবের পৌত্র গৌতম সাধু আজ আমাদের মাঝে উপস্থিত আছেন, তাই দিনটি এ অঞ্চলের মানুষের কাছে অত্যন্ত আবেগঘন ও তাৎপর্যপূর্ণ একটি দিন।”

তিনি আরও বলেন কতিপয় লোকের দুর্বৃত্তায়নের কারনে সকলে কলুষিত হতে পারে না, তারা কারা আমার জানা নেই। রায় সাহেবের স্মৃতির সংরক্ষণের জন্য রাজনৈতিক কোন সংগঠনের প্রয়োজন নেই, কিংবা একাধিক সংগঠনেরও কোন প্রয়োজন নেই। বিনোদ স্মৃতি সংসদ বলুন আর যাই বলুন একটি সংগঠনের মাধ্যমে সকলকে একত্রে একই উদ্দেশ্য নিয়ে রায় সাহেবের স্মৃতিকে অম্লান রাখতে যা কিছু করণীয় আপনারা করবেন, এতে কোন মতভেদ কিংবা রাজনীতির কোন সুযোগ নেই। আমি গৌতম বাবুকে বলতে চাই তার দাদুর প্রতি আমাদের যে ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা তা নিখাঁদ, নিঃস্বার্থ ও নির্মোহ। পুরানো দিনের ক্ষোভ মনে রাখবেন না, আজ আপনাকে আমরা অন্তরের অন্তস্থল থেকে স্বাগত ও অভিনন্দন জানাই।”

সভাপতির বক্তব্যে এ্যাড. দিপঙ্কর কুমার সাহা বলেন- রায় সাহেবের স্মৃতি রক্ষায় আমরা যতকিছুই করি না কেন, রায় সাহেব তার সংক্ষিপ্ত জীবনে এ অঞ্চলের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করতে গিয়ে যে বিশাল ও বর্ণাঢ্য কর্মযজ্ঞ সম্পাদন করেছেন তার প্রতিদান কোন কিছুর বিনিময়েই সম্ভব নয়। রায় সাহেব ও তার পরিবারের প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় আমাদের সকল দোষ ত্রুটির জন্য আমি রায় সাহেবের পরিবারের কাছে করজোড়ে ক্ষমা প্রার্থনা করছি। আপনাদের যোগ্য সম্মান কিভাবে দিতে হবে আমরা তা ভেবে পাই না, তবু আমাদের এই ক্ষুদ্র প্রচেষ্টাকে সার্থক করতে আমাদের ডাকে সাড়া দিয়ে আপনি আমাদের তথা এ অঞ্চলের মানুষদেরকে যে সম্মান দেখিয়েছেন তার জন্য আমরা আপনাদের কাছে আবারও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।”

মুস্তাফিজুর রহমান পারভেজ এর সঞ্চালনায় বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন পাইকগাছা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ আনোয়ার ইকবল মন্টু, পাইকগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মমতাজ বেগম, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক পাপ্পু কুমার দে, কপিলমুনি কলেজের অধ্যক্ষ মোঃ হাবিবুল্যাহ বাহার, কপিলমুনি জাফর আউলিয়া ফাজেল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা মোঃ আব্দুস সাত্তার, কপিলমুনি সহচরী বিদ্যামন্দিরের প্রধান শিক্ষক মোঃ কবির আহম্মেদ, পাইকগাছা থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ জিয়াউর রহমান, কপিলমুনি মেহেরুন্নেচ্ছা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা রহিমা আক্তার শম্পা, বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ, পাইকগাছা শাখার সাধারণ সম্পাদক আনন্দ মোহন বিশ্বাস, কপিলমুনি প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক রাজু, বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ, কপিলমুনি ইউনিয়ন শাখার সভাপতি যুগোল কিশোর দে। অনুষ্ঠানে প্রধান বক্তা ছিলেন কপিলমুনি ইউপি চেয়ারম্যান কওছার আলী জোয়ার্দ্দার ও স্বাগতিক বক্তা ছিলেন কপিলমুনি কলেজের প্রভাষক ও বিনোদ স্মৃতি সংসদের সাধারণ সম্পাদক তাপস কুমার সাধু। এছাড়াও এলাকার গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গ সহ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ও সাংবাদিকবৃন্দরা উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে এলাকাবাসীর সরব ও স্বতঃস্ফূর্ত উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো।


Top