আজ || রবিবার, ১৯ মে ২০২৪
শিরোনাম :
 


বাঙালির সর্বশ্রেষ্ঠ কীর্তি মুক্তিযুদ্ধ

বাংলা ও বাঙালির সর্বশ্রেষ্ঠ কীর্তি মুক্তিযুদ্ধ এর মাধ্যমেই আমরা আজ বাংলাদেশ নামের দেশটি পেয়েছি। মুক্তিযুদ্ধের ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী সংগ্রাম কালেও তালা’য় একটি বির্শিষ্ট ভূমিকা রয়েছে। ভৌগলিক অবস্থান ও এলাকার মানুষের রাজনৈতিক সচেতনতা এই বিশিষ্টতা অর্জনে ভূমিকা রেখেছে। এই অঞ্চলটিতে যেমন ছিল মুক্তিবাহিনী, তেমনি ছিল মুজিব বাহিনী, স্বাধীনতার পক্ষে মুক্তি বাহিনী ও মুজিব বাহিনী মূলতঃ স্বাধীনতার জন্যে সশস্ত্র লড়াইয়ে অংশ গ্রহণকারী একই রাজনৈতিক দলের দু’টি ভাবাদর্শী গোষ্ঠী। ছাত্র-জনতার একটি অংশের মধ্যে বাংলাদেশকে স্বাধীন করার ভাবনাটি পেয়ে বসে। তাদের ভাবনায় ছিল সশস্ত্র যুদ্ধ ছাড়া স্বাধীনতা অসম্ভব। এ কারণেই গোষ্ঠীটি ছাত্রলীগ, শ্রমিকলীগ এবং আওয়ামীলীগের মধ্যে বাছাই করা দক্ষ কর্মী-নেতাদের নিয়ে বেঙ্গল লিবারেশন ফ্রন্ট বিএলএফ নামে একটি গোপন বাহিনী গড়ে তোলে। তাদের নেতৃত্বে এলাকায় গণ-আন্দোলন গড়ে তোলে এবং স্থানীয় সশস্ত্র প্রশিক্ষণ দেয়া-নেয়ার কাজ শুরু হয়। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের গণহত্যার পর দেশের বিভিন্ন জায়গায় মূলতঃ এই বিএলএফ অনুসারীরাই পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। এক পর্যায়ে এই বাহিনীর নেতা-সংগঠকরা ভারতে আশ্রয় নেন এবং বিশেষভাবে গেরিলা ট্রেনিং নেন। লক্ষ্য ছিল, এ ট্রেনিং প্রাপ্তরা দেশের ভিতরে এসে সাধারণ জনগণকে ট্রেনিং দিয়ে গণ-মুক্তিফৌজ গড়ে তুলবে। ভারত সরকারের নিকট থেকে ট্রেনিং নেয়ার পূর্বেই বিএলএফ এর নাম পরিবর্তন করে মুজিব বাহিনী নাম রাখা হয়।
বৃত্তহর খুলনা (খুলনা, সাতক্ষীরা ও বাগেরহাট) জেলার বিএলএফ অনুসারীদের প্রথম ব্যাচের প্রশিক্ষণ হয় ভারতের দেরাদুন ক্যান্টমেন্টে। প্রশিক্ষণটির নাম ছিল লেডারশীপ ট্রেনিং। দ্বিতীয় ব্যাচের ট্রেনিং হয় বিহারের হাফলং। প্রথমবারের লেডারশীপ ট্রেনিং এ অংশ নেন শেখ কামরুজ্জামান (টুকু), বৃহত্তর খুলনা মুজিব বাহিনীর কমান্ডর শেখ ইউনুস আলী, আঞ্চলিক কমান্ডর মোড়ল আব্দুস সালাম তালা থানা মুজিব বাহিনীর কমান্ডর, শেখ জামাল হোসেন, মোস্তাফিজুর রহমান, শেখ আব্দুল কাইয়ুম ও তৌফিক আহমেদ। এর মধ্যে সাতক্ষীরার বাসিন্দা ৪ জন। দুই গ্রুপে প্রশিক্ষণ গ্রহণকারী মোট ৩০ জন ১৯৭১ সালের ১৪ আগস্ট সাতক্ষীরার হাকিমপুর সীমান্ত দিয়ে দেশের মধ্যে প্রবেশ করেন।
এই দলে ইঞ্জিনিয়ার শেখ মুজিবুর রহমান সাতক্ষীরা জেলার মুজিব বাহিনীর কমান্ডার (সাবেক তালা-কলারোয়া এলাকার সংসদ সদস্য), তালা উপজেলার মাগুরার হান্নান, মুড়াগাছার সুজাত, সাত পাকিয়ার লতিফ, শ্রীমন্তকাটির হাকিম, তালার সুভাষ সরকার, কানাইদিয়ার শাহাজান ও সবুর।
যুদ্ধকালীন সময়ে তালা’র পরিস্থিত ছিল ভিন্নতর। তালা থানার পাটকেলঘাটায় ছিল পাকবাহিনীর ঘাঁটি এবং কপিলমুনিতে ছিল বড় পাকবাহিনীর ঘাঁটি। এ কারণে মাগুরায় মুজিব বাহিনীর ক্যাম্প প্রতিষ্ঠিত হয় এবং তালা থানায় বিভিন্ন আঞ্চলিক মুক্তি যোদ্ধা ক্যাম্প গড়ে উঠে। সেখানে সাধারণ মানুষদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হত, সেকারণে অন্যান্য থানার চেয়ে তালা থানায় মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা বেশি হওয়া টাই স্বাভাবিক। এই মুজিব বাহিনীকে ওই পাকবাহিনী প্রথমে আক্রমণ করে। তাদের ভাষায় মুজিব বাহিনী ভারতের দালাল। ‘ভারতের দালাল মুজিব বাহিনীকে খতম কর’ এ মর্মে জনগনের দৃষ্টিকে বিভ্রম করার হীন প্রচেষ্টায় তারা দেওয়াল লেখার কাজ করেছিল। একাত্তরের মার্চ-এপ্রিলে প্রতিরোধ শুরু হলে মুক্তি সেনাদের যে সকল সাধারণ মানুষরা খাবার ও আশ্রয় দিয়ে সহায়তা করেছেন; সেই মানুষরাই রাজাকারের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহণ করতে থাকে। অত্যাচারিত এ জনতা রাজাকারের হাত থেকে বাঁচতে মুজিব বাহিনীকে সহায়তা করে। রাজাকাররা মুজিব বাহিনীর ওপর হামলা চালায়। মুজিব বাহিনী ও পালটা হামলা চালাতে শুরু করে। এ অঞ্চলে প্রথম সার্থক আক্রমণ চালায় পাইকগাছা রাজাকার ঘাঁটিতে। ছোট খাট, খন্ড-খন্ড অনেক লড়াই হয়েছে, মুক্তি বাহিনী ও মুজিব বাহিনীর সদস্যরা মিলে রাজাকারদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছে। সবচেয়ে বড় যুদ্ধটি হয়েছে কপিলমুনিতে। এখানকার রাজাকার বাহিনীর পতন ও ঘটে এবং সেই পতনের পরে কপিলমুনি সহচারী বিদ্যাপীঠ ময়দানে হাজার হাজার জনতার সম্মুখে একটি গন আদালত গঠন করা হয়। এই গন আদালতের রায় অনুযায়ী ২০০ উর্দ্ধে রাজাকারদের বিচারের রায় কার্যকর করা হয়েছিল। বলা যায় খুলনা বিভাগের সর্বশ্রেষ্ট পাকবাহিনীর ঘাটি হিসাবে সুসজ্জ্বিত সুরক্ষিত বিশাল রাজাকার ঘাটি ছিল বলে জানা যায়। যেহেতু দক্ষিণ পশ্চিম এলাকার তালা থানা মুক্তিযোদ্ধাদের তৎকালীন মুক্তিযোদ্ধা ঘাঁটি হিসাবে মাগুরার ঝুনু বাবুর বাড়িটি ব্যবহৃত হত এবং সেখান থেকে সাধারণ মানুষদের স্থানীয় প্রশিক্ষণ দেওয়া হত। এর মধ্যে উল্লেখ্য যোগ্য মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্প তালা উপজেলার বাথুয়া ডাংগা ক্যাম্প। সেকারণে এই এলাকার স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা প্রশিক্ষণ প্রাপ্তিগণরা এখন সহযোগী মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে তাদের স¦ীকৃতি পাওয়ার অধিকার রয়েছে বলে এলাকার মানুষ মনে করেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা মুক্তিযুদ্ধের একটি গৌরব জনক বিরল দৃষ্টান্ত হিসাবে কালের স্বাক্ষী হয়ে আজও আমরা গর্বিত বাঙালী জাতি। যদিও দক্ষিণ পশ্চিম অঞ্চলের মুক্তিযুদ্ধো স্মৃতির সরুপ কোন দৃশ্যমান কিছু স্থাপন করা হয়নি। এই অঞ্চলে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি সংরক্ষনের জন্য সরকারের সু-দৃষ্টি আশা করে এলাকাবাসী।

মীর জিল্লুর রহমান
সাধারণ সম্পাদক,
স্বাধীনতা স্মৃতি সংরক্ষণ পরিষদ
তালা, সাতক্ষীরা।
মোবা:-০১৭২১-১৯৭৩২৯।


Top