আজ || সোমবার, ০৬ মে ২০২৪
শিরোনাম :
  অভিন্ন চাকুরীবিধি বাস্তবায়নের জন্য সাতক্ষীরা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিতে কর্মবিরতি পালন       তালায় বন্ধ রয়েছে পল্লী বিদ্যুতের কার্যক্রম ॥  সেবা থেকে বঞ্চিত গ্রাহকরা         তালায় ১১৫ জন শিক্ষার্থীর মাঝে অর্থ বিতরণ       বৈষম্যের প্রতিবাদে সাতক্ষীরা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিতে কর্মবিরতি পালন       কাপ পিরিচ প্রতীকের পক্ষে প্রভাষক প্রণব ঘোষ বাবলুর গণসংযোগ       তালা উপজেলা চেয়ারম্যান ঘোষ সনৎ কুমারের সমর্থনে বিশাল পথসভা অনুষ্ঠিত       তালা উপজেলা পরিষদ নির্বাচন ॥ প্রতীক পেয়েই প্রচার শুরু       তালায় খাদ্য নিরাপত্তায় ঝুঁকি ও ব্যবস্থাপনা বিষয়ক প্রশিক্ষণ       তালায় ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীদের মাঝে হাঁসের বাচ্চা বিতরণ       তালায় জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহ উপলক্ষ্যে প্রতিযোগিতা    
 


ফিরে কি আর আসবে না?

বেশ কয়েক দিন ধরে একটি বিষয় খুব মনের মাঝে ঘুরপাক খাচ্ছে। পিছে ফেলে আসা সেদিন গুলোর কথা বারবার মনের জানালা দিয়ে উঁকি দিচ্ছে।

ভাবছি আর কি ফিরে আসবেনা সেই দিন গুলো? না আজ কোন ব্যক্তির কথা বলছিনা,বলছি বেশ কিছু বছর আগে আমাদের গ্রাম্য এলাকায় ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের সময় ঘটমান কিছু স্মৃতির কথা। ছোট বেলায় ভোট এলেই এলাকায় এক ধরনের সাজ সাজ রব বিরাজ করতো। বিশেষ করে শীতকালে আমাদের দেশে ভোট হয়ে থাকে। এমনিতেই প্রায় প্রতি বছরই শীতের দিনে স্কুল-কলেজ ছুটি থাকায় উপশহর থেকে গ্রামের বাড়ি বেড়াতে যেতাম স্বপরিবারে। নতুন ধানের চাউলের সাথে খেজুর রসের মিশ্রণে তৈরি হওয়া ক্ষীর-পায়েস, রসের পিঠা, পিঠা-পুলি সহ কত কি। কিন্তু এই সাথে যেবার শীতে ইউনিয়ন পরিষদের ভোট হতো সেবারটি থাকতো একটু অন্যরকম। গ্রামে চাচাতো,ফুফুতো পাড়া প্রতিবেশী মিলে আমাদের ৪০-৫০ জনের অনেক বড় একটা দল ছিল। আমাদের এই দলের সাধারণত মেম্বার ভোট নিয়ে ছিল মাতামাতি।

ভোটার না হলেও আমাদের মত আন্ডার ভোটারদের বিশেষ এক কদর ছিল। কেননা সন্ধ্যা বেলায় গ্রামের মেঠোপথ ধরে মিছিল করতাম গলা ফাটিয়ে, আমার ভাই- তোমার ভাই,উমুক ভাই- তুমুক ভাই, প্যানেল কি আছে-থাকলে বলো,জোরে বলো, এবার ভোটে জীতবে কে-উমুক ভাই ছাড়া আর কে, উমুক ভাই এর মার্কা -…… মার্কা ইত্যাদি নানা পদে শ্লোগান ছিল আমাদের ঠোটোস্থ। চেয়ারম্যান এর বিষয়টি আমাদের বন্ধুদের মধ্যে তেমন একটা গুরুত্ব পেতনা তবে হ্যাঁ মাঝে মধ্যে চেয়ারম্যান পক্ষের মিছিল হলে আমাদেরকে ডাকা হতো দলে ভারী করার জন্য।

নিতান্তই গ্রামের কোন কাকা-চাচা হলে যেতাম না হলে কেটে পড়তাম বিভিন্ন অযুহাতে। গেলেও মিছিল শেষে হাতে ধরিয়ে দিতো লজেঞ্চ। শুধু আমাদের গ্রুফ তা কিন্তু নয় এমন অনেক দল ছিল সেসময়। তো যাই হোক আমাদের মুল আলোচনার বিষয় ছিল মেম্বার নিয়ে। অনেকই আবার মেম্বার সঠিক উচ্চারন করতে পারতো না বলেই মেম্বারকে বলতো নেম্বার। আর এই মেম্বার পক্ষে মিছিল নিয়ে সেবার আমাদের মধ্যে এক মজার কান্ডও ঘটেছিলো, শহীদ নামে আমাদের এক বন্ধু ছিল খুব দুষ্ট প্রকৃতির, সেবার ভোটে শহীদের আব্বা আমাদের খুব কাছে মানুষ রাজ্জাক কাকু,যাকে সবাই পাকিস্তান আমলে মিলিটারির চাকুরী করতে বলে সবাই মিলিটারি রাজ্জাক বলেই চিনতেন।

তিনি মেম্বার প্রার্থী হলেন, উনার প্রতিক ছিল আম আর এনিয়ে যত কান্ডকারখানা শুরু হলো, আমাদের সকলকে শহীদের পক্ষ থেকে নিয়মিত সন্ধ্যায় মিছিলের দাওয়াত পড়ে গেল আমরা স্বদলবলে হাজির, আজ প্রথম মিছিল হবে রাজ্জাক কাকুর,শহীদ হলো আমাদের শ্লোগান মাষ্টার কিন্তু সব সময়তো আমার ভাই তোমার ভাই বলে শুরু করা হয়,কিন্তু আজকের প্রার্থীতো শহীদের আব্বা, তাহলে কি হবে? এনিয়ে শুরু হলো চিন্তা ভাবনা, এদিকে হাতে সময় খুব কম, এই মিছিল শেষে আরেক মিছিলের দাওয়াত আছে। হঠাৎ শহীদ বললো পাইছি! কি পাইছিস এমন প্রশ্নের উত্তরে সে শ্লোগান শুরু করে দিল—- আমার আব্বা তোমার ভাই, রাজ্জাক আব্বা – রাজ্জাক ভাই। এনিয়েতো এলাকা জুড়ে হাসাহাসির রোল পড়ে গেল। যাইহোক এভাবে শ্লোগানে মুখরিত করতে করতে এলাকার অলিগলি ঘুরে এক সময় হাজির হতাম সেই প্রার্থীর বাড়ি।

তারপর প্রার্থীর বাড়ির লোকজন আমাদের জামাই আদরে হ্যাচাক লাইট জ্বালানো বাড়ির উঠানে খেজুর পাতার পাটিতে বসিয়ে চিড়ে -পাটালি নয়তো মুড়ি- বাতাশা দিত। আমাদের মিছিলে নানা বয়সের মানুষও থাকতো খাবার শেষে দেখতাম তাদেরকে পান ও বিড়ি দিত। পানের সাথে কাগজের বিড়ি সুখ টান দিতে বাড়ি ফিরতেন মুরুব্বি গোছের সেই মানুষ গুলো। এভাবেই চলতে ভোটের একদিন আগ পর্যন্ত। তারপর ভোটের দিন প্রতিক সম্বলিত ব্যাচ জামার সাথে ঝুলিয়ে প্রার্থীর জনবল সম্পর্কে কেন্দ্রে আসপাশের জানান দেওয়াটা ছিল এক ধরনের ভাব। ভোট কেন্দ্রের আসপাশের বসতো নানা মনোহরীর দোকান। সব মিলিয়ে ভোট ছিল এক উৎসব। ভোটের দিন সন্ধ্যা নগাদ ফলাফল হাতে পেয়ে বিজয়ী উল্লাসে মিছিল আর শ্লোগান। বিজিত ব্যক্তিকে দেখতাম পরাজিত ব্যক্তির বাড়িতে গিয়ে স্বান্তনা দিয়ে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সামনে এগিয়ে চলার প্রত্যয়।

অতি সম্প্রতি ইট পাথরের শহর থেকে গ্রামের বাড়িে গিয়ে ছিলাম, ভোটের প্রচার প্রচারণা শুরু হয়েছে। এক বড় ভাই এবার মেম্বার প্রার্থী। তাই কয়েক দিন এলাকায় ঘুরলাম,দেখলাম। কিন্তু কি দেখলাম? এটাই নিজের কাছে নিজের প্রশ্ন? মেঠোপথ গুলোতে বসেছে ইট, কোথাও পিচ ঠালা রাস্তা, হারিয়ে যাওয়া হ্যাচাকের পরিবর্তে বিদ্যুতে আলোয় সব কিছু আলোকিত। হাতে গোনা দু একটা মোদি দোকানের পরিবর্তে মোড়ে মোড়ে চায়ের দোকান। সব কিছুতে এসেছে নতুনত্বের জোয়ার। কিন্তু ভোটের সেই আনন্দ নেই, নেই সেই ভোট উৎসব। হারিয়ে গেছে শ্লোগান,মিছিল, কোথায় যেন হারিয়ে গেছে চিড়ে-পাটালি,মুড়ি-বাতাসা। আধুনিক সভ্যতার নামে দলাদলির যাতাকলে পিষ্ট হয়ে গেছে ভোট নামের সেই রাজ উৎসব। আজ এলাকা থেকে ফিরে আসার পথে মনের জানালায় কে যেন দাঁড়িয়ে বারংবার প্রশ্ন করছিল ফিরে কি আসবেনা সেদিন গুলি আর?

লেখকঃ রাবিদ মাহমুদ চঞ্চল

গণমাধ্যমে কর্মী ও কলাম লেখক।


Top