আজ || রবিবার, ১৯ মে ২০২৪
শিরোনাম :
 

২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসে প্রকাশ করা হবে রাজাকারদের চূড়ান্ত তালিকা


পাইকগাছার কপিলমুনি মুক্ত দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক

মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান মুক্তিযোদ্ধারা দীর্ঘদিন উপেক্ষিত ছিল। জামায়াত-বিএনপি দীর্ঘ সময় ক্ষমতায় থাকলেও এরা মুক্তিযোদ্ধাদের কল্যাণে কোন কাজ করেনি। বরং মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃতি ইতিহাসকে বারবার কাঁটা-ছেড়া করেছে। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস এবং স্মৃতি বিজড়িত স্থান সংরক্ষণ না করে যুদ্ধ অপরাধী এবং রাজাকারদের পুনর্বাসন করেছে। মন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার যুদ্ধ অপরাধীদের বিচার করে জাতিকে কলঙ্গ মুক্ত করেছে। মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা প্রদান, বাড়ি নির্মাণ এবং সু-চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছে। তিনি বলেন, আইনী জটিলতার কারণে রাজাকারদের তালিকা প্রণয়নে অন্যতম বাঁধা ছিল। ইতোমধ্যে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল আইন ২০২০ এর খসড়া মন্ত্রী সভায় নীতিগত অনুমোদন হয়েছে। আইনটি পাস হলে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় রাজাকার, আলবদর, আল-শামস বাহিনীর সদস্য হিসেবে কর্মকান্ডে লিপ্ত থেকে যারা বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীতা করেছে তাদের তালিকা প্রণয়ন করা হবে। তালিকাটি আগামী ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবসের আগে প্রকাশ করা হতে পরে বলে মন্ত্রী জানান। তিনি ৯ ডিসেম্বর বুধবার দুপুরে খুলনার পাইকগাছা উপজেলার ঐতিহাসিক কপিলমুনি মুক্ত দিবসের আলোচনা সভা এবং কপিলমুনি মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সের নির্মাণ কাজের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এসব কথা বলেন। মন্ত্রী আরো বলেন, গণমাধ্যম ও দেশবাসীর সহযোগিতায় কপিলমুনির ন্যায় এখনো দেশের যে সব মহান মুক্তিযুদ্ধের সময়কার ঐতিহাসিক ঘটনা এবং স্মৃতি বিজড়িত স্থান রয়েছে তা যথাযথভাবে সংরক্ষণ করা হবে। মন্ত্রী দুপুর আড়াই’টার দিকে উপজেলার সীমান্ত কাশিমনগর পৌছালে স্থানীয় সংসদ সদস্য ও উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানানো হয়। এরপর কপিলমুনি বধ্যভূমির স্মৃতিসৌধ ও বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। পরে মন্ত্রী কপিলমুনি মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি কমপ্লেক্সের নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেন। এরপর ঐতিহ্যবাহী মাহমুদকাটী অনির্বাণ লাইব্রেরী ও মুক্তিযুদ্ধের সময় রাজাকার ক্যাম্প হিসেবে ব্যবহৃত রায় সাহেব বিনোদ বিহারীর বাড়ী পরিদর্শন করেন। বিকাল ৪টায় কপিলমুনি সহচরী বিদ্যামন্দির মাঠে খুলনা জেলা প্রশাসন আয়োজিত কপিলমুনি মুক্ত দিবসের আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা) মোঃ সাদেকুর রহমান খান এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় প্রধান বক্তা ছিলেন, পাইকগাছা-কয়রার সংসদ সদস্য আলহাজ্ব মোঃ আক্তারুজ্জামান বাবু। বিশেষ অতিথি ছিলেন, জনপ্রশাসন সচিব শেখ ইউসুফ হারুন, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সচিব তপন কান্তি ঘোষ, উপজেলা চেয়ারম্যান আনোয়ার ইকবাল মন্টু, উপজেলা নির্বাহী অফিসার এবিএম খালিদ হোসেন সিদ্দিকী, পৌর মেয়র সেলিম জাহাঙ্গীর, সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার শেখ শাহাদাৎ হোসেন বাচ্চু, সহকারী কমিশনার (ভূমি) মুহাম্মদ আরাফাতুল আলম, ওসি মোঃ এজাজ শফী, আ’লীগ নেতা সমীরন সাধু, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদ সদস্য শেখ কামরুল হাসান টিপু, ইউপি চেয়ারম্যান কওছার আলী জোয়াদ্দার। সিনিয়র সাংবাদিক নিখিল ভদ্র ও আওয়ামী লীগনেতা আনন্দ মোহন বিশ্বাসের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান রশীদুজ্জামান, মুক্তিযোদ্ধা আবুল কালাম আজাদ, সাবেক ছাত্রনেতা শেখ মোঃ আবু হানিফ সহ মুক্তিযোদ্ধা, শিক্ষক, আওয়ামী লীগ এবং অঙ্গসহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
উল্লেখ্য, ১৯৭১ সালের ৯ ডিসেম্বর খুলনা জেলার পাইকগাছা উপজেলার কপিলমুনিতে মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয়েছিলো রাজাকার বাহিনী। যুদ্ধ শেষে মুক্তিযোদ্ধারা আটক করেন ১৫৫ জন রাজাকার ও যুদ্ধাপরাধীকে। এদিনই কপিলমুনি হাই স্কুল মাঠে জনতার গণআদালতের রায়ে মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হয় ১৫১ জন রাজাকারের। মুক্তিযুদ্ধকালে গণআদালতের রায়ের মাধ্যমে এক সঙ্গে দেড় শতাধিক রাজাকারের শাস্তি দেওয়া মহান মুক্তিযুদ্ধের ঐতিহাসিক একটি ঘটনা। অথচ স্বাধীনতা যুদ্ধের এই ঐতিহাসিক ঘটনার যথাযথ স্বীকৃতি মেলেনি এবং সেখানকার স্মৃতি সংরক্ষণে তেমন কোন কার্যকর উদ্যোগ নিতে দেখা যায়নি। দীর্ঘ প্রতিক্ষারপর বর্তমান সরকার কপিলমুনি মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি সংরক্ষণ এবং গণআদালতের রায় কার্যকরের ঐতিহাসিক স্থান সংরক্ষণ করার পাশাপাশি এবারই প্রথম সরকারিভাবে পালিত হলো কপিলমুনি মুক্ত দিবস।


Top