আজ || সোমবার, ০৬ মে ২০২৪
শিরোনাম :
  তালায় কাপ পিরিচ প্রতীকের শোডাউন       অভিন্ন চাকুরীবিধি বাস্তবায়নের জন্য সাতক্ষীরা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিতে কর্মবিরতি পালন       তালায় বন্ধ রয়েছে পল্লী বিদ্যুতের কার্যক্রম ॥  সেবা থেকে বঞ্চিত গ্রাহকরা         তালায় ১১৫ জন শিক্ষার্থীর মাঝে অর্থ বিতরণ       বৈষম্যের প্রতিবাদে সাতক্ষীরা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিতে কর্মবিরতি পালন       কাপ পিরিচ প্রতীকের পক্ষে প্রভাষক প্রণব ঘোষ বাবলুর গণসংযোগ       তালা উপজেলা চেয়ারম্যান ঘোষ সনৎ কুমারের সমর্থনে বিশাল পথসভা অনুষ্ঠিত       তালা উপজেলা পরিষদ নির্বাচন ॥ প্রতীক পেয়েই প্রচার শুরু       তালায় খাদ্য নিরাপত্তায় ঝুঁকি ও ব্যবস্থাপনা বিষয়ক প্রশিক্ষণ       তালায় ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীদের মাঝে হাঁসের বাচ্চা বিতরণ    
 


কেমন আছে ভাগ্যক্রমে বেঁচে যাওয়া শিশু মারিয়া?

গত ১৫ অক্টোবর ভোরে সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার খলসি গ্রামে বাবা-মা আর বড় দুই ভাই-বোনকে গলা কেটে হত্যা করা হলেও ভাগ্যক্রমে বেঁচে যায় পাঁচ মাসের শিশুকন্যা মারিয়া।  সেদিন ভোর থেকেই তার আশ্রয় হয় স্থানীয় হেলাতলা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য নাসিমা খাতুনের কাছে। পরে প্রশাসনের পক্ষ থেকেও প্রাথমিকভাবে তাকে দেখাশোনার দায়িত্ব দেওয়া হয় নাসিমা খাতুনের ওপর। সেই থেকেই নাসিমা খাতুনের কাছে মায়ের মমতায় দিন কাটছে শিশুটির।
১৫ অক্টোবর ভোরে খলসি গ্রামের শাহাজান আলীর ছেলে হ্যাচারি মালিক শাহিনুর রহমান (৪০), তার স্ত্রী সাবিনা খাতুন (৩০), ছেলে সিয়াম হোসেন মাহি (৯) ও মেয়ে তাসনিমকে (৬) গলা কেটে হত্যা করা হয়। এ সময় বেঁচে যায় শাহিনুর-সাবিনা দম্পতির ছোট মেয়ে মারিয়া।  বাবা-মা হারা ছোট্ট মারিয়া এখন কেমন আছে তা জানতে সাধারণ মানুষের যেন কৌতূহলের শেষ নেই, এখনো তাকে দেখতে প্রতিদিন ইউপি সদস্য নাসিমা খাতুনের বাড়িতে ভিড় করছেন অনেকেই। জানাচ্ছেন সমবেদনা, দোয়া করছেন মারিয়ার জন্য।

ইউপি সদস্য নাসিমা খাতুন বলেন, ওর মা যখন বেঁচে ছিল, তখন মায়ের মুখে মুখ দিয়ে আদর নিত। মুখে খামচি দিত। মারিয়া ঠিক সেভাবেই আমার মুখে খামচি দিচ্ছে, আমার মুখের ভেতর মুখ দিয়ে আদর নিচ্ছে। খিল খিল করে হাসছে। আবার রাতে ঘুমের ঘোরে হঠাৎ হঠাৎ কেঁপে কেঁদেও ওঠে।

তিনি আরও বলেন, দুনিয়ায় মারিয়ার কেউ না থাকলেও আমি আছি। আমার দুই ছেলে, কোনো মেয়ে নেই। আমি মেয়ে পেয়েছি।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মৌসুমী জেরীন কান্তার মাধ্যমে পাঠানো চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র অনুযায়ী ওষুধ খাওয়ানোয় মারিয়া এখন ভালো আছে। সম্প্রতি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম লাল্টুর স্ত্রী এসে একটি দোলনা দিয়ে গেছেন। এছাড়া মারিয়ার নানা-নানি এসে তাকে নিয়ে যেতে চেয়েছিলেন। কিন্তু প্রশাসনের অনুমতি না থাকায় তাদের কাছে মারিয়াকে দেওয়া হয়নি, যোগ করেন তিনি।

নাসিমা খাতুন বলেন, এখানে তার কোনো সমস্যা নেই। আমার ছেলের বউরাও ওকে দেখাশোনা করছে, আদর করছে, দুধ খাওয়াচ্ছে। রাতে আমার কাছেই মারিয়া ঘুমায়।

এদিকে, শিশু মারিয়াকে শেষ পর্যন্ত কার কাছে দেওয়া হবে- এখন এমন প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে সর্বত্র।

এসব বিষয়ে খোঁজ খবর নিয়ে জানা গেছে, এরই মধ্যে দাদি, চাচি ও নানা-নানি, এমনকি ইউপি সদস্য নাসিমা খাতুনও স্থায়ীভাবে মারিয়ার দায়িত্ব নেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। যদিও এ বিষয়ে এখনো কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়নি প্রশাসন।

এ প্রসঙ্গে ইউপি সদস্য নাসিমা খাতুন বলেন, হত্যাকাণ্ডের শিকার শাহিনুরের মা সাহেদা খাতুন বয়সের ভারে নুয়ে পড়েছেন। এ অবস্থায় শিশুটিকে দেখভালের জন্য প্রশাসন প্রাথমিকভাবে আমাকে দায়িত্ব দিয়েছে। আমাকে কোনো কিছু দিতে হবে না, কোনো সহায়তা লাগবে না, আমাকে মারিয়ার দায়িত্ব স্থায়ীভাবে দিলেই আমি তাকে নিজের মেয়ের মতো করে মানুষ করতে চাই৷

মারিয়া এখন অনেক ভালো আছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ওর বুকের দুধ খাওয়ার অভ্যাস। প্রথমে হঠাৎ করে কৌটার দুধ পান করতে চাচ্ছিল না। তবে এখন পান করছে। ওকে বাড়ি আনার সঙ্গে সঙ্গে আমার স্বামী শরিফুল ইসলাম বাজার থেকে দুধ, নতুন জামা-কাপড় থেকে শুরু করে মারিয়ার যা যা প্রয়োজন সবই কিনে এনেছেন। এছাড়া জেলা প্রশাসক এসএম মোস্তফা কামাল দুধসহ অন্যান্য সামগ্রী পাঠিয়েছেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মৌসুমী জেরিন কান্তাও সার্বক্ষণিক খোঁজ-খবর রাখছেন। আমি প্রশাসনকে জানিয়েছি, মারিয়ার দায়িত্ব আমাকে দেওয়া হোক।

মারিয়ার দাদি সাহেদা খাতুন বলেন, হত্যাকাণ্ডে জড়িত আমার ছোট ছেলে রাহানুর পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়েছে৷ আমি তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। তার সঙ্গে আমার আর কোনো সম্পর্ক নেই। আমি আমার বংশের সম্বল শিশু মারিয়াকে আঁকড়ে ধরে বেঁচে থাকতে চাই। মারিয়াকে আমার দায়িত্বে দেওয়া হোক। তার দেখাশোনায় কোনো ত্রুটি হবে না৷

মারিয়ার মেজো চাচি বলেন, আমাদের বংশের একমাত্র অবলম্বন মারিয়াকে আমি আমরা মেয়ের মতো করে রাখতে চাই। ঘটনার দিন আমরা মানসিকভাবে ভেঙে পড়ায় প্রশাসন তাকে ইউপি সদস্য নাসিমা খাতুনের জিম্মায় দেয়। সেখানে আমরা তাকে সারাজীবন রাখব না। তাকে আমাদের পরিবারে দেওয়া হোক।

অপরদিকে, মারিয়ার নানি ময়না খাতুন বলেন, আমরা মারিয়াকে এখানে রাখতে চাই না। তাকে আমাদের বাড়ি ঝিকরগাছায় নিয়ে মানুষ করতে চাই।  তিনি প্রধানমন্ত্রীর কাছে মারিয়ার ভবিষ্যতের জন্য একটা গতি করে দেওয়ার অনুরোধ করেছেন।

এ প্রসঙ্গে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক এসএম মোস্তফা কামাল বলেন, শিশুটির সুন্দর ও স্বাভাবিক পরিবেশে বেড়ে ওঠা এবং ভরণ-পোষণের নিশ্চয়তা পেলে সবার সঙ্গে আলোচনা করে তাকে কার কাছে দেওয়া হবে, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

এদিকে, ঘটনার কয়েকদিনের মধ্যেই হত্যার রহস্য উন্মোচন করতে সক্ষম হয় সিআইডি পুলিশ। এ ঘটনায় গ্রেফতার করা হয় হত্যার শিকার মাছ ব্যবসায়ী শাহিনুরের ছোট ভাই রাহানুরকে। রাহানুর হত্যার বিষয়টি স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দেন। উদ্ধার করা হয় হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত অস্ত্রও।

এদিকে, সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক এসএম মোস্তফা কামাল হত্যাকাণ্ডের দিনই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন এবং ভাগ্যক্রমে বেঁচে যাওয়া পাঁচ মাস বয়সী শিশু মারিয়ার দেখভালের দায়িত্ব নিয়ে প্রাথমিকভাবে তাকে দেখাশোনার জন্য স্থানীয় ইউপি সদস্য নাসিমা খাতুনকে দায়িত্ব দেন। সেই থেকে মারিয়া সেখানেই রয়েছে।


Top