আজ || রবিবার, ১৯ মে ২০২৪
শিরোনাম :
 


আশাশুনিতে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাইয়ের নামে অনিয়মের অভিযোগ

প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের নাম বাদ দেওয়া এবং অমুক্তিযোদ্ধাদের নাম তালিকায় অর্ন্তভুক্তি করাসহ বিভিন্ন অনিয়মের প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন করেছেন, আশাশুনি উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা জনতা সমন্বয় কমিটি। রোববার দুপুরে সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবে আব্দুল মোতালেব মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন, কমিটির আহবায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আব্দুর রহমান।
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, আশাশুনি উপজেলায় মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাইয়ের নামে লক্ষ লক্ষ টাকা গ্রহণ করছেন যাচাই বাছাই কমিটি। অর্থের বিনিময়ে তারা মুক্তিযুদ্ধের সময় ৮ বছর বয়সি ব্যক্তিকেও অর্থের বিনিময়ে মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় নাম অর্ন্তভূক্ত করেছেন। আবার প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের নামও তালিকা থেকে বাদ দেয়া হয়েছে। এসব অনিয়ম করেছেন যাচাই বাছাই কমিটির সভাপতি আমির হোসেন জোয়ার্দ্দার ও সদস্য দেবদুলাল রায়।
সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয়, এই কমিটি মহামান্য হাইকোর্টের আদেশ উপেক্ষা করে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই কার্যক্রম শেষ করেছেন। সেই তালিকায় অনেক রাজাকার, শান্তি কমিটির সদস্য ও অমুক্তিযোদ্ধাদের নাম তালিকাভুক্ত করেছেন এবং গেজেটভূক্ত বেশ কিছু প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাকে আক্রোশমুলকভাবে বাদ দিয়েছেন।
সংবাদ সম্মেলনে মুক্তিযোদ্ধারা আরো অভিযোগ করেন, ২০১৭ সালে মোঃ নুরুল হুদাকে সভাপতি করে ৭ সদস্য বিশিষ্ট একটি যাচাই-বাছাই কমিটি গঠন হয়। এই কমিটির বিরুদ্ধে অর্থ নিয়ে মুক্তিযোদ্ধা বানানোর অভিযোগ উত্থাপিত হয়। এই অভিযোগে কমিটির বিরুদ্ধে বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল গণি মহামাণ্য হাইকোর্টে কমিটি বাতিল চেয়ে একটি রিট পিটিশন দায়ের করেন। হাইকোর্ট শুনানী শেষে ২০১৮ সালের ৭ জানুয়ারি যাচাই-বাছাই কমিটির কার্যক্রম বাতিল ঘোষনা করেন। এই আদেশের বিপরীতে বিবাদী পক্ষ হাইকোর্টে আপিল করেন। হাইকোর্ট ২০১৯ সালের ২০ জানুয়ারি আপিল খারিজ করে পূর্বের রায় বহাল রাখেন। কিন্তু এই আদেশও উপেক্ষা করে ২০১৯ সালে আবারো আব্দুল আহাদকে সভাপতি করে তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন গঠন হয়। এই কমিটির বিরুদ্ধেও আর্থিক লেন দেনের অভিযোগ ওঠে। পরে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল যাচাই-বাছাই কমিটির কার্যক্রম বাতিল করেন।
সম্মেলনে জানানো হয়, আশাশুনি উপজেলায় গেজেটভূক্ত মুক্তিয্দ্ধোার সংখ্যা ৪১১ জন। এর মধ্যে ৩০ জনকে তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া, ৪১২ জন মুক্তিযোদ্ধা নাম অর্ন্তভ’ক্ত করার জন্য অনলাইনে আবেদন করেছেন। এই অনলাইন আবেদন থেকেও ২৬৪ জনকে বাদ দেওয়া হয়েছে। বাদ দেওয়ার মধ্যে অনেকই প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা রয়েছেন। আর অর্ন্তভুক্তির মধ্যে রয়েছে অনেক রাজাকার, পিস কমিটির সদস্য ও স্বাধীনতা বিরোধী।
সংবাদ সম্মেলনে আরো বলা হয়, উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমিটির কার্যক্রম বেশ কিছু দিন বন্ধ থাকার পর চলতি বছরের ২২ জানুয়ারি বর্তমান জেলা প্রশাসক এস এম মোস্তফা কামাল দুই সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করেন। কমিটিতে আবারো দূর্ণীতিবাজ আমির হোসেন জোয়ার্দ্দারকে সভাপতি ও দেবদুলাল রায়কে সদস্য করা হয়েছে। পদাধিকার বলে কমিটির অপর সদস্য হয়েছেন উপজেলা নির্বাহি কর্মকর্তা। সম্মেলনে জানানো হয়, গঠিত এই কমিটির বিরুদ্ধেও মহামান্য হাইকোর্টে রীট করা হয়েছে। এবং আদালত এই কমিটির কার্যক্রম বন্ধের আদেশ দিয়েছেন। এরপরও কমিটি তাদের কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে। বিষয়টি নিয়ে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ চেয়ে উপস্থিত মুক্তিযোদ্ধারা বাদ পড়া প্রকৃত মুিক্তযোদ্ধাদের নাম পূণরায় তালিকায় অর্ন্তভূক্ত করা, রাজাকার ও স্বাধীনতা বিরোধীদের তালিকা থেকে বাদ দেয়া এবং দূর্ণীতিবাজ কমিটির কার্যক্রম বন্ধ রাখার আহবান জানান।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, আশাশুনি উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা জনতা সমন্বয় কমিটির যুগ্ম-আহবায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল গনি, শ্রীউলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু হেনা সাকিল, সাবেক প্্িরন্সিপাল ও বীর মুক্তিযোদ্ধা এস এ এম আব্দুল ওয়াহেদ, বীর মুক্তিযোদ্ধা মকবুল হোসেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল জলিল, বীর মুক্তিযোদ্ধা রমজান আলী, বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল আজিজ সরদার, বীর মুক্তিযোদ্ধা আমজাদ হোসেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু ব্কর সিদ্দিক, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা নজরুল ইসলাম প্রমূখ।
এ বিষয়ে আমির হোসেন জোয়ার্দ্দার বলেন, যাচাই-বাছাইয়ে কোনো দূর্ণীতি অনিয়ম করা হয়নি। অর্থ নেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে তিনি বলেন, সরকারের নির্দেশিকা অনুযায়ি সব কিছু করা হয়েছে।


Top