আজ || রবিবার, ১৯ মে ২০২৪
শিরোনাম :
 


আমার মুজিব

সুচনাঃ স্বাধীনতার মহান স্থপতি হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আমার অমর কাব্যের কবি। আমার চেতনা ও আদর্শের ভিত্তি শেখ মুজিব। জীবনে বুঝতে শেখার প্রথম থেকে তাঁর আদর্শ আমাকে চলতে শিখিয়েছে, বলতে শিখিয়েছে, ভাবতে শিখিয়েছে। তাই বিশ্বনন্দিত এই মহামানব আমার মুজিব হিসেবে অন্তরে চিরজাগরুক হিসেবে থাকবে সারাজীবন। আদর্শঃ বঙ্গবন্ধুর আদর্শের প্রধান দিক হল তার পাহাড়সম দেশপ্রেম। সেই দেশপ্রেমের ফসল হল আমাদের মহান স্বাধীনতা। এমন সুন্দর একটি দেশ পেতাম না বঙ্গবন্ধু না থাকলে। তাই তার দেশপ্রেমের চেতনায় উজ্জীবিত আমি, যেকারণে মুজিব আমার মধ্যে সবসময় আছে। তাকে ধারণ করেছি দেশপ্রেমের চেতনায় নিজেকে আগামীর বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে। কথায় বলে, স্বদেশের উপকারে নেই যার মন, কে বলে মানুষ তারে পশু সেইজন।
সাহসিকতাঃ বঙ্গবন্ধুর সাহসের কথা বলতে গেলে শিহরিত হয়ে উঠি। দেশপ্রেমকে কাজে লাগিয়ে অসীম সাহসের গুণে তিনি হয়ে উঠতে পেরেছিলেন বাঙালির মুক্তির কাণ্ডারী। সকল আন্দোলন ও সংগ্রামে দেশপ্রেম ও সাহস থাকে খুব কাছাকাছি। একটি ছাড়া অন্যটি অচল। তাই দেশপ্রেমের মন্ত্রে দীক্ষিত বঙ্গবন্ধুর অসম সাহস আমাদের একটি স্বাধীন দেশ পাইয়ে দিতে প্রধান অস্ত্র হিসেবে কাজ করেছিল। আমি ছোট বেলা থেকে আমার পরিবার, আমার পরিবেশ তথা সমাজ থেকে জানা তথ্যে বঙ্গবন্ধুর সাহসের যে পরিচয় পেয়েছি, তা ধারণ করার চেষ্টা করছি।
সুতরাং আমার মুজিব বলতে সামান্যতম দ্বিধা নেই বরং গর্বে বুক ফুলে ওঠে। প্রতিবাদীঃ দেশপ্রেম, সাহস এর মিশেলে কিছু সৃষ্টি করতে গেলে আরেকটি উপাদানের ভীষণ প্রয়োজন পড়ে। সেটি হল প্রতিবাদী মন। যেখানে অন্যায়, অনিয়ম, স্বজনপ্রীতি সেখানেই প্রতিবাদ করতে হবে। গড়ে তুলতে হবে প্রতিরোধ। এজন্য প্রতিবাদী হওয়া সর্বাগ্রে প্রয়োজন। আমি নিজেকে যতটুকু প্রতিবাদী করতে সক্ষম হয়েছি, তার সবটুকু বঙ্গবন্ধুর কাছ থেকে। তার প্রতিবাদের আগুনে ভস্মীভূত হয়ে বিদায় নিয়েছিল পাক-হানাদার। ছাত্রাবস্থায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মচারীদের স্বার্থে প্রতিবাদ করতে গিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়লেও আপোষ করেননি। এই দৃঢ় মনোবলের মানুষটি কিংবদন্তীতুল্য বিশ্বনেতা আজ। প্রতিবাদী ছিলেন বলেই পুর্বপাকিস্তানের মানুষের প্রতি বৈষম্য তিনি সহ্য করেননি। তার প্রতিবাদ ও বীরত্বের ফসল ৫২, ৫৪, ৫৮, ৬২, ৬৬, ৬৭, ৬৮, ৬৯, ৭০ ও ৭১ এর মহান মুক্তিযুদ্ধ। চুড়ান্ত ফসল মহান স্বাধীনতা অর্জন।
সততা ও নৈতিকতাঃ যেকোন কিছু অর্জন করতে হলে সততার বিকল্প নেই। এই সততা ও নৈতিকতায় তিনি ছিলেন বিরল গুণের অধিকারী। কোন লোভ-লালসা তাকে তার লক্ষ্য থেকে সরাতে পারেনি। তিনি শত বিপদে পড়েও কোনদিন মিথ্যার আশ্রয় নিয়েছেন, এমন কিছুই পাওয়া যায়নি। সততার মুর্ত প্রতিক তিনি। দেশব্যাপী সততা ও নৈতিকতার চাষ করতে পেরেছিলেন বলেই মাত্র ৯ মাসে দেশ স্বাধীন করার মত অসম্ভবকে সম্ভব করেছিলেন। তার এসব গুণের চর্চা করি তাকে ভালবেসে। তার প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা নিরন্তর।
মানবীয় গুণাবলীঃ তিনি শৌর্যেবির্যে যেমন পরাক্রমশালী ছিলেন, আন্দোলনঅগ্নির লেলিহান শিখায় প্রতিপক্ষকে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে দিতে সিদ্ধহস্ত ছিলেন, তেমনি মানবিকতায় ছিলেন সমুজ্জ্বল এক প্রবাদপ্রতিম মহাপুরুষ। তার মানবিকতার ঢের ঘটনা আজ ইতিহাসের পাতাকে ধন্য করেছে। ছাত্রাবস্থায় নিজের ছাতা অন্যকে দেওয়া, গায়ের চাদর খুলে দেওয়া, ধানের গোলা খুলে দেওয়ার ঘটনাগুলি আমাদের হৃদয় স্পর্শ করে, আবেগতাড়িত করে, শেখায় অন্যের জন্য কিভাবে নিজেকে উজাড় করতে হয়, কিভাবে মানবসেবায় নিজেকে উৎসর্গ করতে হয়, দেশ ও দশের জন্য কিভাবে জীবন বাজি রাখতে হয়। তার মানবিকতার এই মহান দৃষ্টান্তগুলি বিশ্বমানবতার অংশ, অগ্নিস্ফুলিঙ্গ।
রাজনীতি : তার রাজনীতি ছিল মা, মাটি ও দেশের জন্য। তাকে বলা হয় রাজনীতির কবি। এই কবির কবিতার প্রতিতি পঙতিতে ফুটে উঠেছে মেহনতী মানুষের কথা, খেটে খাওয়া মানুষের কথা, দেশের আবালবৃদ্ধবনিতার কথা। অধিকারের কথা। স্বাধীনতার ঘোষণা ও নেতৃত্বদানঃ মুলত ৭ মার্চের ঐতিহাসিক পভাষণেই বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন, তিনি গ্রেফতার হতে পারেন, হত্যা হতে পারেন, এই দুরদর্শিতার জায়গা থেকে তিনি আগাম স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন। এরপরও ১৯৭১ এর ২৬ মার্চ আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন। মহান স্বাধীনতায় নেতৃত্বদানকারী এই দুরদর্শিতাসম্পন্ন বঙ্গবন্ধুর মত মানুষ বসবাস করবে প্রতিটি মানুষের হৃদয়মন্দিরে, এটাই স্বাভাবিক। সুতরাং আমার মুজিব বলতে গর্ববোধ করি, উচ্ছ্বসিত হই, আহলাদিত হই।
শেষ কথাঃ পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা লিখলেও আমার মুজিবের কথা লিখে শেষ করার সুযোগ নেই। আজ প্রতিটি ঘর বঙ্গবন্ধুর, প্রতিঘরে তিনি বাস করছেন। প্রতিটি মানুষ আজ বঙ্গবন্ধু, কারণ প্রতিটি মানুষ বঙ্গবন্ধুকে ধারণ করেছে। প্রতিটি মানুষ সগৌরবে বলতে পারছে আমার মুজিব। জাতির এই ত্রাণকর্তার মৃত্যু নেই। ১৯২০-১৯৭৫ এর সংক্ষিপ্ত সময়ে আমাদের মাঝে থাকলেও তার ব্যাপ্তি, দ্যুতি আজও দেদীপ্যমান স্বমহিমায়। স্যালুট আমার মুজিবকে। কিউবার প্রেসিডেন্ট তাই যথার্থ বলেছিলেন, আমি হিমালয় দেখিনি, বঙ্গবন্ধুকে দেখেছি।
লেখক :  শিক্ষার্থী, সাতক্ষীরা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়।


Top