“মানুষের একটাই দাবি, আমরা ত্রাণ চাই না, আমরা একটা নিরাপদ আর টেকসই ভেড়ি বাঁধ চাই।” এলাকাবাসীরা বলেন, মানুষকে বারবার দুর্ভোগ পোহাতে না হয়, আইলায় ডুবে গেছে, সিডরে ডুবে গেছে, আম্পানে আবার ডুবে গেল, এ জন্য মানুষ চায় শক্ত টেকসই একটা ভেড়ি বাঁধ।” ঘরবাড়ি হারিয়ে মানুষ যেমন বিপর্যস্ত, তেমনি তাদের জীবন জীবিকাও এখনও বড় ধরনের হুমকির মুখে। তারা জানেন না কীভাবে তারা আবার ঘুরে দাঁড়াবেন।“এ সব এলাকাতে বাগদা চিংড়ির চাষ হয়। প্রচুর চিংড়ি এখানে উৎপাদন হয়। কিন্তু সেই ঘের গুলা সব নদীতে ভেসে গেছে, মানুষের প্রচণ্ড ক্ষতি হয়েছে। সে ক্ষতির কোন সীমা নেই। “
২০০৭ এর প্রলয়ংকারী সিডর, আর ২০০৯ এর সর্বনাশী আইলার পর এবার সুপার সাইক্লোন আম্পানে লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে খুলনার কয়রা উপজেলা। গত দশকের প্রাকৃতিক ধ্বংসাত্মক ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই সুপার সাইক্লোন আম্পান নোনা জলে তলিয়ে দিলো সমগ্র উপজেলাটি। আম্পানের তাণ্ডবে কয়রায় ১২১কি.মি বেড়িবাঁধের মধ্যে ২১ জায়গায় ৪০ কি.মিটারেরও অধিক বাঁধ ভেঙে গেছে ৷ এর মধ্যেই আজ ঈদুল ফিতরের দিন সেই ক্ষতিগ্রস্থ বাঁধ নির্মাণে অংশ নিলেন উপজেলার হাজার হাজার মানুষ। পানিতে দাড়িয়ে ঈদের নামাজ আদায় শেষে তারা অংশ নিলেন বাঁধ নির্মানে। ঈদের নামাজে ইমামতি করেন প্রাক্তন প্রাক্তন উপজেলা চেয়ারম্যান মাওলানা তমিজ উদ্দীন।
গত ২০ মে আম্পানের তাণ্ডবলীলায় নদী ও সমুদ্রের নোনা জলে বিলীন হয়ে গেছে এ অঞ্চলের মানুষের জনজীবন। বাঁধ ভেঙে অস্বাস্থ্যকর দূষিত নোনা পানির তলে অবস্থান করছে উপজেলাটির ৬টি ইউনিয়নের প্রায় ৬২ টি গ্রাম। আম্পানের ফলে উপজেলার ১ লাখ ৮৪ হাজারেরও অধিক মানুষ হয়েছে গৃহহীন। নোনা পানিতে ডুবে গেছে সাড়ে ৪ হেক্টর চিংড়ি ও সাদা মাছের ঘের। নষ্ট হওয়া ১০-১১ মেট্রিক টন চিংড়ি ও সাদা মাছের বাজার মূল্য প্রায় ৫০ কোটি টাকা। নেই খাওয়া ও থাকার জায়গা, নোনা পানিতে ভেসে বেড়াচ্ছে সুন্দরবন কোল ঘেঁষা উপজেলার মানুষেরা।
কয়রা সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো: হুমায়ুন কবির বলেন, নোনা জলে মানুষ চরম ভোগান্তিতে বসবাস করছে। আজ ঈদের ভাঙ্গা বাঁধের পাশে অনুষ্ঠিত হবার পর সকলের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে বাঁধের নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে।
কয়রা উপজেলার চেয়ারম্যান আলহাজ্ব এস এম শফিকুল ইসলাম বলেন, এ বছর পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) গাফলতি ও নিজস্ব ঠিকাদার দিয়ে নির্মিত বাঁধ সমূহ আম্পানে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। তিনি জনগনের দাবীর সাথে একাত্বতা ঘোষনা করে টেকসই স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের জন্য পাউবো এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়কে আহবান করেন।
কয়রা উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা শিমুল কুমার বিশ্বাস বলেন, আমরা ভেড়ি বাধঁ নির্মাণ প্রক্রিয়া দ্রুত চালু করতে ওপর মহলকে জানিয়েছি। অতিদ্রুত সময়ের মধ্যে বাঁধ নির্মাণ কাজ শুরু করা হবে।